Picture of SuperAdmin

SuperAdmin

Video Editor

শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য: একটি অবহেলিত বিষয়

বর্তমান সমাজে শিক্ষার্থীদের শারীরিক স্বাস্থ্যের দিকে যথেষ্ট নজর দেওয়া হলেও মানসিক স্বাস্থ্য, বিশেষ করে শিশু-কিশোর ও তরুণ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে, এখনো অবহেলিত। মানসিক স্বাস্থ্য এমন একটি ক্ষেত্র, যা ছাত্রছাত্রীদের মেধা, মনন ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, অভিভাবক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই বিষয়টিকে সেভাবে গুরুত্ব দেন না, ফলে শিক্ষার্থীরা মানসিক চাপে ভুগতে থাকে এবং এটি তাদের জীবনের নানা ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। 

 শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যার বিস্তৃতি

বর্তমান বিশ্বে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক সমস্যার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউনিসেফের এক জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন কিশোর-কিশোরী মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় ভুগছে। বাংলাদেশেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক সমস্যার হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৩৫% শিক্ষার্থী পরীক্ষার চাপে, পরিবারের প্রত্যাশার চাপ এবং ভবিষ্যতের চিন্তায় হতাশার শিকার হচ্ছে।

কাহিনী: এক কিশোর শিক্ষার্থীর সংগ্রাম

সুমন, ঢাকার একটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। সে সবসময়ই পড়াশোনায় ভালো ছিল। তবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় তার উপর পরিবারের চাপ বাড়তে থাকে। তার বাবা-মা চেয়েছিলেন সুমন মেডিকেলে ভর্তি হোক, কিন্তু সুমনের নিজস্ব আগ্রহ ছিল না এই বিষয়ে। বাবা-মার প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কায় সুমন ধীরে ধীরে হতাশায় ভুগতে থাকে। শেষে, পরীক্ষার দিনগুলিতে সুমন এমন চাপ অনুভব করে যে তার মনোযোগ সম্পূর্ণরূপে বিঘ্নিত হয়, এবং সে পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল করতে পারে না। এই উদাহরণটি দেখায় কিভাবে পরিবারের অতিরিক্ত প্রত্যাশা এবং মানসিক চাপ শিক্ষার্থীদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা কেন অবহেলিত?

বাংলাদেশের সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে নানা ধরনের ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। অনেকেই মনে করেন, মানসিক সমস্যা থাকলে তা লজ্জার বিষয়। এই কারণে, ছাত্র-ছাত্রীরা নিজে থেকে মানসিক সমস্যা নিয়ে কথা বলতে লজ্জা পায় এবং সেই সাথে পিতা-মাতারাও এটি অবহেলা করে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মানসিক সমস্যাগুলি “সাময়িক সমস্যা” হিসাবে দেখা হয়, যা শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবনে প্রভাব ফেলে। 

এছাড়াও, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর যথাযথ মনোযোগ দেওয়া হয় না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরামর্শদাতা বা কাউন্সেলিং সেবার অভাব রয়েছে, ফলে ছাত্রছাত্রীরা মানসিক সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পায় না। 

মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা ও এর প্রভাব

শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যা প্রধানত উদ্বেগ, হতাশা, বিষণ্নতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, এবং মাঝে মাঝে আত্মহত্যার চিন্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এর কারণ হিসেবে পরীক্ষার চাপ, পিতামাতার প্রত্যাশা, সহপাঠীদের সঙ্গে তুলনা, আর্থিক সমস্যা এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা উল্লেখযোগ্য। 

পরিসংখ্যান : মানসিক সমস্যার বর্তমান পরিস্থিতি

একটি জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রায় ২০% শিক্ষার্থী কোনো না কোনো মানসিক চাপে ভুগছে। বিশেষ করে, উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই হার সবচেয়ে বেশি। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যা হলো মৃত্যুর তৃতীয় বৃহত্তম কারণ।

 শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে করণীয়

শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এখানে কিছু প্রস্তাবনা দেওয়া হলো যা পরিবারের সদস্য এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উভয়েই পালন করতে পারেন:

১. খোলা মনের আলোচনা: পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের সাথে মানসিক সমস্যা নিয়ে খোলা মনের আলোচনা করতে পারে। এতে শিক্ষার্থীরা নিজের মানসিক সমস্যা প্রকাশ করতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করবে এবং উপযুক্ত পরামর্শ নিতে পারবে।

২. পরামর্শদাতা নিয়োগ: স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শদাতা নিয়োগ করা অত্যন্ত জরুরি। এসব পরামর্শদাতারা শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে তাদের মানসিক সমস্যা নির্ণয় ও সমাধানের চেষ্টা করতে পারেন।

৩. চাপ কমানো: পরীক্ষার ফলাফলকে জীবনের সবকিছু মনে না করা এবং শিক্ষার্থীদের নিজের আগ্রহ অনুসারে ক্যারিয়ার গড়তে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। পিতা-মাতার উচিত, সন্তানদের সাথে আলোচনা করে তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া।

৪. মানসিক সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচি: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচি চালানো যেতে পারে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানতে এবং বুঝতে পারবে, যা মানসিক সমস্যার মোকাবিলায় সহায়ক হবে।

৫. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই তাদের নিয়ন্ত্রিত সময়ের জন্য ব্যবহারে সচেতন করা উচিত।

 

শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। এই বিষয়ে অবহেলা করা তাদের ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সমাজের প্রতিটি স্তরে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন।

May you like -----