Picture of SuperAdmin

SuperAdmin

Video Editor

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার ঘাটতি: সমস্যার মূল কারণ ও করণীয়

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় গবেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় দিক হলেও, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার ঘাটতি বেশ উদ্বেগজনক। প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণার মান এবং পরিমাণে আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। গবেষণার অভাবের কারণে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা সঠিক জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না, যা তাদের কর্মজীবনে প্রতিকূল প্রভাব ফেলছে। এই সমস্যার মূল কারণগুলো বিশ্লেষণ করে এর সমাধানমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব প্রয়োজনীয়।

গবেষণার ঘাটতির কারণসমূহ

১. পর্যাপ্ত অর্থায়নের অভাব: বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন খুবই সীমিত। গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল না থাকার কারণে অনেক প্রকল্প মাঝপথে থেমে যায় অথবা উচ্চমানের গবেষণা পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। এক গবেষণায় দেখা গেছে, উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণায় বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ৮০% কম।

২. গবেষণা সহায়ক অবকাঠামোর অভাব: অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত গবেষণাগার নেই। গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি এবং অবকাঠামোর অভাবের কারণে শিক্ষার্থীরা নিজেদের গবেষণামূলক চিন্তা এবং দক্ষতা বিকশিত করতে পারে না।

৩. গবেষণাকেন্দ্রিক প্রশিক্ষণের ঘাটতি: বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণা করতে হলে সঠিক প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী গবেষণা পদ্ধতির বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন না। ফলে তারা আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা করতে পারেন না।

৪. গবেষণা অনুপ্রেরণার অভাব: গবেষণার প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে পারছে না বলে অনেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক গবেষণায় অংশগ্রহণে আগ্রহ হারাচ্ছেন। গবেষণার ফলাফল বা সফলতাকে মূল্যায়ন বা সম্মান না করার প্রবণতা এর একটি বড় কারণ।

৫. বৈশ্বিক সংযোগের অভাব: বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কম। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে গবেষণার জন্য সমঝোতা বা মেন্টরশিপ প্রোগ্রামের অভাবে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানের গবেষণায় যুক্ত হতে পারছে না।

গবেষণার ঘাটতির পরিসংখ্যান

ব্রিটিশ কাউন্সিলের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশের হার দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। ২০২২ সালে, দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মিলিতভাবে মাত্র ২০০০টির মতো গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে ভারতের একক কিছু বিশ্ববিদ্যালয়েই এই সংখ্যাটি ১০০০০ এর উপরে। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, গবেষণার ক্ষেত্রে আমাদের বিশাল ঘাটতি রয়েছে।

গবেষণার ঘাটতি কমাতে করণীয়

গবেষণার ঘাটতি কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এতে গবেষণার পরিমাণ এবং মান উভয়ই বৃদ্ধি পাবে। নিচে কয়েকটি কার্যকরী পদক্ষেপ উল্লেখ করা হলো:

১. গবেষণায় তহবিল বরাদ্দ বৃদ্ধি: সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে গবেষণায় তহবিল বরাদ্দে মনোযোগী হতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত গবেষণার জন্য আলাদা তহবিল তৈরি করা এবং বেসরকারি খাতের সাথে গবেষণার জন্য সহযোগিতামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা।

২. গবেষণাগার এবং প্রযুক্তিগত সুবিধা বৃদ্ধি: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চমানের গবেষণাগার স্থাপন এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা জরুরি। এতে শিক্ষার্থীরা গবেষণায় উৎসাহিত হবে এবং বাস্তবধর্মী ফলাফল অর্জন করতে পারবে।

৩. গবেষণাকেন্দ্রিক প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কশপ: শিক্ষকদের জন্য গবেষণা পদ্ধতির উপর প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণামূলক ওয়ার্কশপ আয়োজন করা উচিত। এতে শিক্ষার্থীরা গবেষণা পদ্ধতির সঠিক দিকনির্দেশনা পাবে।

৪. গবেষণায় উৎসাহ প্রদান ও সম্মাননা: গবেষণায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য শিক্ষকদের ও শিক্ষার্থীদের জন্য পুরস্কার এবং প্রণোদনা ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। এতে গবেষণার প্রতি শিক্ষার্থীদের উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে।

৫. আন্তর্জাতিক সংযোগ স্থাপন: বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে গবেষণার ক্ষেত্রে সহযোগিতা গড়ে তোলা উচিত। আন্তর্জাতিক গবেষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে সংযোগ বৃদ্ধি করলে গবেষণার মানও উন্নত হবে এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা সম্ভব হবে।

উদাহরণ: সফল গবেষণার উদাহরণ

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার ঘাটতি কমাতে ভারতের আইআইটি (IIT) মডেল অনুসরণ করা যেতে পারে। আইআইটিতে গবেষণার জন্য আলাদা তহবিল এবং গবেষণাগারের সুব্যবস্থা রয়েছে, যা তাদের শিক্ষার্থীদের উচ্চমানের গবেষণা করতে সহায়তা করে। এই প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা প্রতি বছর অসংখ্য আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করে। 

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার ঘাটতি বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিদ্যমান। গবেষণা না থাকার কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে পিছিয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে হলে সরকার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় গবেষণা খাতকে এগিয়ে নিতে হবে। গবেষণার মাধ্যমে জাতি উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে এবং ভবিষ্যতে শিক্ষার গুণগত মান আরও সমৃদ্ধ হবে।

May you like -----