Education Insights

🌟️Get unlimited access to the best of ClickNews for less than $1/week

Picture of Farhan Ahmed

Farhan Ahmed

Video Editor

প্রাথমিক পর্যায়ে STEM শিক্ষা: কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

বর্তমান যুগের চাহিদা অনুযায়ী, শিশুদের ভবিষ্যতে সফল হতে হলে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত—এসব বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এক কথায়, এসব ক্ষেত্রের সম্মিলিত শিক্ষা ‘STEM শিক্ষা’ (Science, Technology, Engineering, Mathematics) নামে পরিচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে STEM শিক্ষার গুরুত্ব প্রতিটি শিশুকে ভবিষ্যতের জন্য দক্ষ ও উদ্ভাবনী করে তুলতে সহায়ক।

STEM শিক্ষার বর্তমান প্রেক্ষাপট

আজকের দুনিয়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আগামী দশকে বিশ্বের প্রায় ৭০% চাকরি STEM বিষয়ে দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য উন্মুক্ত হবে। আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এখনও অনেকাংশে মুখস্থ নির্ভর, যেখানে ছাত্ররা তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন করলেও সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়। প্রাথমিক স্তরে STEM শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন না হলে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকবে।

কেন প্রাথমিক স্তরে STEM শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ?

১. উদ্ভাবনী ও সমাধানমুখী চিন্তা গড়ে তোলে: STEM শিক্ষা ছাত্রদের উদ্ভাবনী চিন্তা গড়ে তুলতে সহায়ক। উদাহরণস্বরূপ, প্রথম শ্রেণীর এক ছাত্রের কাহিনি ধরা যাক, যার নাম আদি। আদি তার স্কুলে একটি STEM প্রজেক্টে অংশগ্রহণ করে, যেখানে তাকে একটি সহজ জলচালিত গাড়ি বানাতে বলা হয়। এই অভিজ্ঞতা তার কাছে শুধু একটি মজার খেলাই নয়, বরং তার ভেতরে উদ্ভাবনী চিন্তা জাগিয়ে তোলে। STEM শিক্ষা শিশুদের বাস্তব সমস্যা সমাধানে সক্ষম করে।

২. যুক্তি ও বিশ্লেষণাত্মক চিন্তার বিকাশ: STEM বিষয়ে শিশুরা লজিক্যাল এবং বিশ্লেষণাত্মক চিন্তা করতে শেখে। প্রাথমিক স্তরেই যদি তারা সঠিকভাবে যুক্তির সাথে সমস্যার সমাধান করতে শেখে, তাহলে তাদের পরবর্তী শিক্ষাজীবন ও কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন সহজ হবে।

৩. কর্মসংস্থানের প্রস্তুতি: বর্তমান ও ভবিষ্যতের চাকরির বাজারে STEM দক্ষতার চাহিদা ব্যাপক। ২০২৩ সালে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৯০% হাই-টেক চাকরি STEM শিক্ষা ও দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য। প্রাথমিক পর্যায়েই STEM বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠলে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতের চাকরি ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাবে।

৪. সৃজনশীলতা এবং কৌতূহলের বিকাশ: STEM শিক্ষা শিশুরা সৃজনশীল হতে শেখে। ছোট্ট বিজ্ঞান প্রজেক্ট, রোবটিক্স ক্লাস, অথবা গণিতের চ্যালেঞ্জগুলোর মাধ্যমে শিশুদের কৌতূহল বাড়ে। উদাহরণস্বরূপ, একজন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী নীলা, তার স্কুলের বিজ্ঞান ক্লাসে নিজে নিজে একটি মিনি রকেট তৈরি করেছে, যা তার কৌতূহলকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এবং বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী করেছে।

STEM শিক্ষার চ্যালেঞ্জ ও সমাধান

বাংলাদেশে STEM শিক্ষার প্রসারে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। স্কুলগুলোর অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই, শিক্ষকদের STEM বিষয়ে সঠিক প্রশিক্ষণ নেই, এবং শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দেয়া হয় না। 

সমাধান:

১. শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ: প্রাথমিক স্তরে STEM শিক্ষাকে জনপ্রিয় করতে হলে STEM বিষয়ে দক্ষ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো STEM বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে পারে।

২. প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও অবকাঠামো প্রদান: স্কুলগুলোতে STEM ল্যাব এবং সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা জরুরি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা স্থানীয় প্রশাসন স্কুলগুলোতে এধরনের সরঞ্জামাদি প্রদান করতে পারে।

৩. সৃজনশীল প্রকল্প ও প্রতিযোগিতা: শিক্ষার্থীদের STEM শিক্ষায় আগ্রহী করতে বিভিন্ন সৃজনশীল প্রকল্প এবং প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে। যেমন, স্থানীয় বা জাতীয় বিজ্ঞান মেলা বা রোবটিক্স প্রতিযোগিতা, যেখানে শিশুদের অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করা হবে।

৪. পরীক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন: মুখস্থবিদ্যা নির্ভর পরীক্ষার পরিবর্তে সমস্যাভিত্তিক ও প্রকল্প নির্ভর পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হলে শিক্ষার্থীরা STEM বিষয়ে আরও বেশি দক্ষ হয়ে উঠবে।

STEM শিক্ষার বৈশ্বিক সফল উদাহরণ

ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, এবং জাপানের শিক্ষাব্যবস্থায় STEM শিক্ষাকে প্রাথমিক পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই দেশগুলোর শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক STEM প্রতিযোগিতায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ফিনল্যান্ডের স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের বাস্তবমুখী বিজ্ঞান প্রজেক্টে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়, যার ফলে তারা ছোট বয়সেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে।

প্রাথমিক স্তরে STEM শিক্ষার গুরুত্ব অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এটি শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করে না, বরং তাদের ভবিষ্যতের জন্যও প্রস্তুত করে তোলে। বাংলাদেশে STEM শিক্ষার প্রচলন এবং প্রসার ঘটাতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। STEM শিক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হবে এবং ভবিষ্যতের উন্নত সমাজ গঠনে অবদান রাখতে পারবে।

May you like -----