Education Insights

🌟️Get unlimited access to the best of ClickNews for less than $1/week

Picture of Rafiul Islam

Rafiul Islam

Video Editor

প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা: গ্রামাঞ্চলে ডিজিটাল ডিভাইডের প্রভাব

প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে শিক্ষা ক্ষেত্রেও এসেছে এক আমূল পরিবর্তন। এখন শিক্ষক আর শিক্ষার্থীদের সরাসরি উপস্থিতি ছাড়াই শিক্ষাগ্রহণ সম্ভব হচ্ছে, যা বিশেষ করে শহরাঞ্চলের জন্য বেশ কার্যকর। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে কি এই প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা সঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছে? নাকি প্রযুক্তিগত সুবিধা না থাকায় গ্রামীণ শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে?

ডিজিটাল ডিভাইড: সমস্যা ও কারণ

ডিজিটাল ডিভাইড বলতে বোঝায় প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধার ব্যবধান। বিশ্বব্যাপী শহরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও অন্যান্য ডিজিটাল সুবিধা থেকে অনেকাংশে বঞ্চিত। বাংলাদেশে প্রায় ৭০% মানুষ গ্রামাঞ্চলে বাস করে, কিন্তু তাদের মধ্যে খুব কমই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (BTRC) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৬৫% মানুষের ইন্টারনেট অ্যাক্সেস থাকলেও এর বড় অংশই শহর কেন্দ্রীক।

প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ

করোনা মহামারীর সময়ে অনলাইন শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীরা যখন স্কুলে যেতে পারছিল না, তখন অনলাইন শিক্ষা সিস্টেমই তাদের একমাত্র ভরসা ছিল। কিন্তু শহরের বেশিরভাগ স্কুল যেখানে জুম বা গুগল মিট ব্যবহার করে ক্লাস চালিয়ে গেছে, গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটের অভাবে সম্পূর্ণ শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত ছিল। রাজশাহীর বাগমারার এক ছোট্ট গ্রাম থেকে ১৬ বছর বয়সী সুমির গল্প ধরা যাক। করোনা সময়ে অনলাইন ক্লাসে যোগ দেয়ার জন্য তার বাবা-মা তাকে ৩ ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে শহরের নিকটবর্তী একটি স্থানে নিয়ে যেতেন, যেখানে ইন্টারনেট সিগন্যাল পাওয়া যেত।

শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তির অভাব: কিছু পরিসংখ্যান

* বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রায় ১৮% হলেও, গ্রামাঞ্চলে তা প্রায় স্থবির।

* শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ২৫% স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে, যেখানে ৭৫% এর বেশি শহুরে ছাত্রছাত্রীদের রয়েছে।

শিক্ষায় প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্তির প্রভাব

প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা কেবল ছাত্রছাত্রীদের শেখার মানকে বাড়ায় না, বরং তাদের দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাসকেও বৃদ্ধি করে। তবে এটি নিশ্চিত করতে হবে যে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও একই সুবিধা পাচ্ছে। বাংলাদেশের ‘একশপ’ এবং ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ এর মতো উদ্যোগগুলি প্রযুক্তি শিক্ষাকে আরও সহজলভ্য করার লক্ষ্যে কাজ করছে। 

সিলেটের গোলাপগঞ্জের রোকন উদ্দিনের উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। সে একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক এবং নিজের চেষ্টায় মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে ছাত্রদেরকে বিভিন্ন বিষয় শেখানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ইন্টারনেট স্পিডের কারণে শিক্ষার্থীরা অনেক সময় ভিডিও দেখতে পারে না, ফলে ক্লাসে অংশ নিতে বাধা সৃষ্টি হয়।

কীভাবে ডিজিটাল ডিভাইড কমানো যায়?

গ্রামাঞ্চলে ডিজিটাল ডিভাইড কমানোর জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হতে পারে:

  1. ইন্টারনেট অবকাঠামোর উন্নতি: ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সেবা গ্রামে পৌঁছে দিতে হবে।
  2. মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রশিক্ষণ: স্কুলের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দেয়া উচিত।
  3. ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি: স্থানীয় ভাষায় ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করলে শিক্ষার্থীরা শিখতে আরও উৎসাহী হবে।
  4. সরকারি অনুদান ও প্রণোদনা: যারা অনলাইন শিক্ষামাধ্যমে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী, তাদের জন্য বিশেষ অনুদান দেওয়া যেতে পারে।

ডিজিটাল ডিভাইড গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাগত বৈষম্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে এই বৈষম্য কমানো সম্ভব। প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা গ্রামের প্রতিটি ছাত্রের কাছে পৌঁছে দিলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আসবে এক নতুন দিগন্ত।

May you like -----