Education Insights

🌟️Get unlimited access to the best of ClickNews for less than $1/week

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের পথে ২০২১ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষাক্রম একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে আলোচিত হয়েছে। এই শিক্ষাক্রমের মূল উদ্দেশ্য ছিল বর্তমান যুগোপযোগী ও বৈশ্বিক চাহিদার সাথে মিল রেখে এমন একটি শিক্ষা কাঠামো তৈরি করা, যা শিক্ষার্থীদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতার জন্য প্রস্তুত করবে। তবে সাম্প্রতিক কিছু বিতর্ক ও সমালোচনার ফলে এই শিক্ষাক্রম বাতিলের সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, যদি ২০২১-এর শিক্ষাক্রম বাতিল করা হয়, তবে ভবিষ্যতে আমাদের শিক্ষা কাঠামো কোন পথে এগোবে?

শিক্ষাক্রম ২০২১-এর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১-এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা, কৌতূহল এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটাবে। এই শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে শুধুমাত্র বইয়ের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বাস্তব জীবনের দক্ষতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছিল। যেমন, প্রাথমিক পর্যায় থেকেই শিশুদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতের (STEM) ধারণা শেখানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। 

তাছাড়া, বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তিগত উন্নতির সাথে মিল রেখে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভাষাগত দক্ষতা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির জ্ঞান এবং অন্যান্য কার্যকরী দক্ষতার বিকাশ ঘটানোর জন্য এই শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়। 

সমালোচনার কারণসমূহ

যদিও শিক্ষাক্রম ২০২১-এর উদ্দেশ্য ছিল প্রশংসনীয়, কিন্তু এর কার্যকারিতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা ওঠে। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সমালোচনা হল:

১. প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা: বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উচ্চমানের শিক্ষা উপকরণ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকার কারণে এই শিক্ষাক্রম পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা কঠিন।

২. শিক্ষার্থীদের চাপ: বিভিন্ন নতুন বিষয় ও দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

৩. পরীক্ষার পদ্ধতি:  শিক্ষার্থীদের বাস্তব দক্ষতার মূল্যায়নের জন্য উপযুক্ত পরীক্ষা পদ্ধতি ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৭৫% গ্রামীণ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তিগত সহায়তার অভাবে এই শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণ করতে সক্ষম হচ্ছে না। এই ধরনের সীমাবদ্ধতা শিক্ষাক্রমটি পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর করার পথে বড় বাধা সৃষ্টি করেছে।

শিক্ষাক্রম বাতিলের সম্ভাবনা: কারণ ও প্রভাব

বিভিন্ন বিতর্ক ও বাস্তবায়নজনিত সীমাবদ্ধতার কারণে সরকার শিক্ষাক্রম ২০২১ পুনঃবিবেচনা করছে। এর ফলে এই শিক্ষাক্রম বাতিলের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যদি শিক্ষাক্রমটি বাতিল হয়, তবে এর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে ভাবা প্রয়োজন। 

  • ইতিবাচক প্রভাব: শিক্ষার্থীদের চাপ কমে যাবে এবং তারা পূর্বের শিক্ষার সাথে সহজে খাপ খাওয়াতে পারবে। 
  • নেতিবাচক প্রভাব: এর ফলে শিক্ষার্থীরা আধুনিক প্রযুক্তি ও বৈশ্বিক দক্ষতার সাথে মিল রেখে শিক্ষাগ্রহণে ব্যর্থ হতে পারে, যা ভবিষ্যতে কর্মসংস্থানে প্রভাব ফেলবে।

ভবিষ্যৎ শিক্ষা কাঠামোর দিকনির্দেশনা

জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১ বাতিলের পর কী ধরনের শিক্ষা কাঠামো গড়ে তোলা উচিত, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে নানা ধরনের মতামত রয়েছে। কিছু সুপারিশ নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

১. হাইব্রিড শিক্ষাব্যবস্থা: প্রচলিত পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার সাথে ইন্টারেক্টিভ শিক্ষাব্যবস্থা যুক্ত করে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখার অভিজ্ঞতা প্রদান করা।

২. প্রযুক্তি-নির্ভর শিক্ষা: শিক্ষা ব্যবস্থা ডিজিটাল মাধ্যমে আরও বেশি সহজলভ্য করে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযুক্তি ও তথ্যভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিত করা। 

৩. সৃজনশীলতা ও সমালোচনামূলক চিন্তার বিকাশ: শিক্ষার্থীদের এমন কিছু কার্যক্রমে যুক্ত করতে হবে যা তাদের চিন্তাশক্তি বাড়ায় এবং সমালোচনামূলক বিশ্লেষণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

 

জাপানের উদাহরণ টেনে বলা যেতে পারে যে, তাদের শিক্ষাব্যবস্থায় দক্ষতার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়, যা ভবিষ্যতের বাংলাদেশের শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১ বাতিলের সম্ভাবনা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে একটি গভীর চিন্তার সুযোগ করে দিয়েছে। ভবিষ্যৎ শিক্ষা কাঠামো কেবল তত্ত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে দক্ষতা এবং বৈশ্বিক চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রণীত হওয়া উচিত। তবেই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ একটি কার্যকর ও উন্নত শিক্ষা কাঠামো অর্জন করতে সক্ষম হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *