Picture of SuperAdmin

SuperAdmin

Video Editor

কর্মসংস্থানভিত্তিক শিক্ষা: বাংলাদেশে টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষা নিয়ে নতুন ভাবনা

বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য কর্মসংস্থানভিত্তিক শিক্ষা একটি অপরিহার্য দিক। এ দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর বড় অংশ এখনো শুধু সাধারণ শিক্ষার ওপর নির্ভরশীল, যা প্রত্যাশিত কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারছে না। দক্ষতার অভাবে বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে। বিশ্বব্যাংকের এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের বেকারত্বের হার ৪.২%, যার একটি বড় অংশ তরুণ জনগোষ্ঠী। বিশ্বব্যাপী টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষা (TVET) কর্মসংস্থান বাড়াতে সফলভাবে ভূমিকা রাখছে। তবে বাংলাদেশে টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষার ক্ষেত্রে এখনো সামাজিক ধারণার পরিবর্তন এবং সরকারী পর্যায়ে বিশেষ মনোযোগের প্রয়োজন।

বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীই টেকনিক্যাল বা ভোকেশনাল শিক্ষাকে “কম মূল্যবান” বলে মনে করে, ফলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সাধারণ শিক্ষার দিকে ঝুঁকে পড়ে। কিন্তু দক্ষতাভিত্তিক কর্মসংস্থানের চাহিদা বাড়ায় বর্তমান সময়ে টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। সম্প্রতি সরকার এই বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে এবং কারিগরি শিক্ষাকে প্রধান ধারায় আনতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৯ সালে প্রায় ৮০০টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন করা হয়েছে এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে। কিন্তু শুধু স্থাপনা নয়, প্রয়োজন শিক্ষাক্রমের আধুনিকায়ন, প্রায়োগিক শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি এবং শিক্ষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ।

একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে সুমনের, যে একটি সরকারি টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের উপর প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। তার গ্রামের অনেকেই ভেবেছিল যে সে “সাধারণ শিক্ষা” পায়নি বলে তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। কিন্তু সুমন তার দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে একটি আন্তর্জাতিক আইটি ফার্মে চাকরি পায়। সুমনের মতো অনেক শিক্ষার্থীই আজ টেকনিক্যাল শিক্ষার মাধ্যমে সফলতার মুখ দেখছে এবং সমাজে প্রচলিত ধারণাকে পাল্টে দিচ্ছে।

বর্তমান সময়ে টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষায় বিনিয়োগ করা হলে বাংলাদেশের যুবসমাজকে আরও দক্ষ করে তুলতে পারে এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষিতরা তাদের চাকরির ক্ষেত্র সহজেই খুঁজে পায় এবং তাদের আয়ও তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। UNESCO-র একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পায় এবং দেশীয় অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখতে সক্ষম হয়। সুতরাং, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানভিত্তিক শিক্ষার প্রচলন শুধু চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির একটি চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করতে পারে। 

এই প্রেক্ষাপটে, সরকার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকদের একত্রে কাজ করতে হবে। তরুণদের কাছে টেকনিক্যাল শিক্ষার গুরুত্ব ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তুলে ধরার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞানের পরিবর্তে বাস্তবমুখী শিক্ষার প্রতি জোর দিয়ে একটি দক্ষ জনশক্তি গঠন করতে পারলে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

May you like -----